আপনি একাই যখন "৪ জন রক্তদাতা"...
নাহ ৪ ব্যাগ রক্ত দিতে হবে না সেজন্য, মাত্র ১ ব্যাগ প্লাটিলেট দিলেই আপনি কিন্তু ৪ জন রক্তদাতার কাজ একাই করতে পারবেন...
কিভাবে?
তবে এর আগে চলুন আমরা কিছু বেসিক তথ্য জেনে নেই... ধরুন, একজন ক্যান্সার রোগীর জন্য ১ ইউনিট / ১ ব্যাগ প্লাটিলেট প্রয়োজন... সাধারনত এই এক ব্যাগ প্লাটিলেট সংগ্রহ করতে ৪ জন রক্তদাতার প্রয়োজন হয়... প্রথমে ৪ জন রক্তদাতা থেকে ৪ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয় এবং প্রতি ব্যাগ রক্ত থেকে প্লাটিলেটগুলো আলাদা করে ১ ব্যাগ প্লাটিলেট করা হয়...
এবার জেনে নেই, আপনি কিভাবে ৪ জন রক্তদাতার কাজ একাই করবেন
'Plateletpheresis' বা 'প্লাটিলেটফেরেসিস' পদ্ধতিতে ১ ব্যাগ প্লাটিলেট সংগ্রহ করতে ৪ জন রক্তদাতার প্রয়োজন হয় না... একজন রক্তদাতা থেকেই ১ ব্যাগ প্লাটিলেট সংগ্রহ করা হয়... তার মানে , সাধারন পদ্ধতিতে যেখানে ৪ জন রক্তদাতার প্রয়োজন হয়, সেখানে 'প্লাটিলেটফেরেসিস' পদ্ধতিতে মাত্র ১ জন রক্তদাতার প্রয়োজন হয়... অর্থাৎ আপনি একাই ৪ জন রক্তদাতার কাজ করে ফেলছেন
এখন প্রশ্ন হতে পারে, আপনি ৪ জনের প্লাটিলেট একাই দিচ্ছেন এতে আপনার শারীরিক কোনো ক্ষতি হচ্ছে কিনা... চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী, 'প্লাটিলেটফেরেসিস' পদ্ধতিতে একজন রক্তদাতা থেকে প্লাটিলেট সংগ্রহ করলে রক্তদাতার শরীর থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ প্লাটিলেট কমে যায়, যা ক্লিনিকালি তেমন কোনো বড় অংশ নয় রক্তদাতার জন্য... মানে, যতটুকু প্লাটিলেট কাউন্ট কমছে তা রক্তদাতার শারীরিক কোনো অসুবিধার কারন হবে না... সম্পূর্ণ নিরাপদ...
এবং সবচেয়ে মজার তথ্য হল, প্লাটিলেটের জীবনকাল মাত্র ৮ থেকে ৯ দিন... এবং তাই, আপনি চাইলে প্রতি ১৫ দিন পর পর প্লাটিলেট দান করতে পারেন... বছরের ২৪ বার দান করাও সম্ভব... কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ভাবে...
(প্লাটিলেট দান করার ১৫ দিন পর সরাসরি রক্তদানও করতে পারবেন...)
----------------------------------------------------------------------------------------
'প্লাটিলেটফেরেসিস' পদ্ধতি কিভাবে কাজ করে?
- প্রথমে রক্তদাতার শরীর থেকে কিছু পরিমান রক্ত 'প্লাটিলেটফেরেসিস' মেশিনটির একটি পাত্রে জমা হয় এবং সে পাত্র থেকে রক্তের প্লাটিলেট, প্লাজমা এবং রেড ব্লাড সেল আলাদা হয়ে ৩ টি আলাদা পাত্রে জমা হয়... তারপর, এই জমাকৃত 'রেড ব্লাড সেল' গুলো যান্ত্রিকভাবে রক্তদাতার শরীরে আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়... প্লাটিলেট এবং প্লাজমা কিন্তু আগের পাত্রেই আলাদা রয়ে গেল...
- 'রেড ব্লাড সেল' শরীরে ফিরে যাবার পর প্রক্রিয়াটি আবার প্রথম থেকে শুরু হয়... অর্থাৎ নতুন করে আরো কিছু রক্ত মেশিনটির পাত্রে জমা হয়... সেখান থেকে প্লাটিলেট, প্লাজমা এবং রেড ব্লাড সেল আলাদা পাত্রে জমা হয়... এবং 'রেড ব্লাড সেল' গুলো পুনরায় শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়...
- এভাবে যখন প্লাটিলেটের পাত্রটি পূর্ণ হয়ে যায়, তখন প্লাটিলেটের পাত্রটি সরিয়ে নেয়া হয় এবং আলাদা পাত্রে জমা হওয়া 'প্লাজমা' পুরোটাই রক্তদাতার শরীরে আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়...
- 'রেড ব্লাড সেল' শরীরে ফিরে যাবার পর প্রক্রিয়াটি আবার প্রথম থেকে শুরু হয়... অর্থাৎ নতুন করে আরো কিছু রক্ত মেশিনটির পাত্রে জমা হয়... সেখান থেকে প্লাটিলেট, প্লাজমা এবং রেড ব্লাড সেল আলাদা পাত্রে জমা হয়... এবং 'রেড ব্লাড সেল' গুলো পুনরায় শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়...
- এভাবে যখন প্লাটিলেটের পাত্রটি পূর্ণ হয়ে যায়, তখন প্লাটিলেটের পাত্রটি সরিয়ে নেয়া হয় এবং আলাদা পাত্রে জমা হওয়া 'প্লাজমা' পুরোটাই রক্তদাতার শরীরে আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়...
ব্যস
----------------------------------------------------------------------------------------
নোটঃ
১) 'প্লাটিলেটফেরেসিস' পদ্ধতি অনেক সময় সাপেক্ষ... এই পদ্ধতিতে প্লাটিলেট দান করতে দেড় থেকে ২ ঘন্টা সময় লাগে... (৪ জনের কাজ একাই করছেন, একটু সময় না হয় লাগলই গান শুনতে থাকবেন, ফেইসবুক গুতাবেন, ম্যাগাজিন পড়বেন... দেখবেন ২ ঘন্টা এমনি চলে যাবে )
২) এই পদ্ধতির জন্য স্বাস্থ্যবান রক্তদাতার প্রয়োজন হয়... কমপক্ষে ৫৫ কেজি ওজন হতে হয়... এবং পুরুষ রক্তদাতা হলে ভাল... কারন পুরুষ রক্তদাতাদের প্লাটিলেট কাউন্ট বেশি থাকে...
৩) 'প্লাজমা' ফিরিয়ে দেয়ার সময় রক্তদাতা বেশ 'শীত শীত' অনুভব করেন... 'প্লাজমা'গুলো সমস্ত শরীরের সাথে এডজাস্ট হতে কিছুটা সময় লাগে, তাই এমন অনুভূত হয়...
৪) এই পদ্ধতিতে প্লাটিলেট সংগ্রহ ব্যয়বহুল... তবে ৪ জন রক্তদাতা ম্যানেজ করা থেকে ১ জন রক্তদাতা খুজে পাওয়া বেশ সহজ - তাই এই পদ্ধতি অনেক গ্রহণযোগ্য...
৫) 'প্লাটিলেটফেরেসিস' পদ্ধতিকে অনেকে 'এফেরেসিস' পদ্ধতিও বলে... যদিও 'এফেরেসিস' আরো বিস্তৃত বিষয়... 'এফেরেসিস' সিস্টেমের মধ্যে যেটায় শুধু প্লাটিলেট কালেক্ট করা হয় সে পদ্ধতির নাম 'প্লাটিলেটফেরেসিস'...
৬) আমাদের দেশে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতাল, ধানমন্ডি ল্যাব এইড হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল, এপোলো হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন হসপিটাল, ক্যান্সার হাসপাতালে
১) 'প্লাটিলেটফেরেসিস' পদ্ধতি অনেক সময় সাপেক্ষ... এই পদ্ধতিতে প্লাটিলেট দান করতে দেড় থেকে ২ ঘন্টা সময় লাগে... (৪ জনের কাজ একাই করছেন, একটু সময় না হয় লাগলই গান শুনতে থাকবেন, ফেইসবুক গুতাবেন, ম্যাগাজিন পড়বেন... দেখবেন ২ ঘন্টা এমনি চলে যাবে )
২) এই পদ্ধতির জন্য স্বাস্থ্যবান রক্তদাতার প্রয়োজন হয়... কমপক্ষে ৫৫ কেজি ওজন হতে হয়... এবং পুরুষ রক্তদাতা হলে ভাল... কারন পুরুষ রক্তদাতাদের প্লাটিলেট কাউন্ট বেশি থাকে...
৩) 'প্লাজমা' ফিরিয়ে দেয়ার সময় রক্তদাতা বেশ 'শীত শীত' অনুভব করেন... 'প্লাজমা'গুলো সমস্ত শরীরের সাথে এডজাস্ট হতে কিছুটা সময় লাগে, তাই এমন অনুভূত হয়...
৪) এই পদ্ধতিতে প্লাটিলেট সংগ্রহ ব্যয়বহুল... তবে ৪ জন রক্তদাতা ম্যানেজ করা থেকে ১ জন রক্তদাতা খুজে পাওয়া বেশ সহজ - তাই এই পদ্ধতি অনেক গ্রহণযোগ্য...
৫) 'প্লাটিলেটফেরেসিস' পদ্ধতিকে অনেকে 'এফেরেসিস' পদ্ধতিও বলে... যদিও 'এফেরেসিস' আরো বিস্তৃত বিষয়... 'এফেরেসিস' সিস্টেমের মধ্যে যেটায় শুধু প্লাটিলেট কালেক্ট করা হয় সে পদ্ধতির নাম 'প্লাটিলেটফেরেসিস'...
৬) আমাদের দেশে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতাল, ধানমন্ডি ল্যাব এইড হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল, এপোলো হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন হসপিটাল, ক্যান্সার হাসপাতালে
ঢামেক,বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল,পিজি 'প্লাটিলেটফেরেসিস' এর ব্যবস্থা রয়েছে...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন